নাবিল ভয় পাচ্ছে। তাই জড়োসড়ো হয়ে আছে সে। আর স্মরণ করছে সৃষ্টিকর্তাকে। নাবিলের ভয়ের কারণ গাড়ির অস্বাভাবিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ গতি। এমন গতিতে যানবাহন চললে দুর্ঘটনা নিশ্চিত। আর যদি ভালোয় ভালোয় গন্তব্যে পৌঁছা যায়, বুঝতে হবে পরম করুণাময়ের বিশেষ দয়া ছিল। নাবিল এখন আকুল হয়ে সেই দয়াটুকুই চাচ্ছে তার কাছে। যদি তিনি চাওয়া পূরণ না করেন, তাহলে আজ হয়তো বাগানবাড়িতে যাওয়া হবে না। যেতে হবে পঙ্গু হাসপাতালে অথবা গোরস্থানে। একা না, সপরিবারে। বাবা নিজেও ভয় পাচ্ছেন। মা তো পাচ্ছেনই। তবু তারা ড্রাইভারকে কিছু বলছেন না, বলতে পারছেন না। কারণ, এখন গতি কমানোর আদেশ দেওয়া মানেই তাহের ভাইয়ের কোমরে দড়ি পড়া। এই তো দশ মিনিট আগে তিনি বাবাকে ফোন দিয়ে বললেন আপনে যদি তাড়াতাড়ি না আসেন, পুলিশে আমারে গাড়িত তুইলা ফেলবো। থানায় নিয়া যাইবো গা। আর থানায় নিতে পারলে হাড্ডি-গুড্ডি আস্তা রাখবো না। আপনে আল্লার ওয়াস্তে তাড়াতাড়ি আসেন। বাবা ড্রাইভারের দিকে তাকান। বলতে চান আরও জোরে চালানোর কথা। কিন্তু পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে বলতে পারেন না। শুধু ছটফট করতে থাকেন।মা হাত রাখেন বাবার পিঠে। শান্ত করতে চান তাকে। এতে তার ছটফটানি যেন আরও বেড়ে যায়। দরদর করে ঘামতে থাকেন তিনি। অথচ এখন হেমন্তকাল। বাবা যখন অল্প অল্প ঘামছিলেন, তখনই এসি ছেড়ে দিয়েছিল ড্রাইভার। এবার সে ঠান্ডা বাড়িয়ে দেয়। আর বলতে চায় এত টেনশন কইরেন না স্যার। আপনে কিন্তু প্রেসারের রোগী। যেকোনো সময় যেকোনো অঘটন ঘইটা যাইতে পারে। একটা কর্মচারীর লাইগা টেনশন কইরা নিজের ক্ষতি করবেন কী জন্য? বাবা যদি এখন তাহের ভাই ছাড়া অন্য কারো জন্য ‘টেনশন’ করতেন, তাহলে কথাগুলো বলেই ফেলত ড্রাইভার। হয়তো গাড়ির গতিও কমিয়ে দিত। ঝিমুনি আসার অজুহাত দিয়ে রাস্তার পাশের দোকানের রং চা খেয়ে নেওয়ার আবদার করতো। ড্রাইভার জানে, তাহের ভাই বেতনভুক্ত হলেও বাবা তাকে কর্মচারী মনে করেন না। ছেলের মতো দেখেন, আপন ভাতিজার মতো দেখেন। আরও জানে, তার ব্যাপারে নেতিবাচক কিছু বলা মানে চাকরি হারানো। : কালাম। টিস্যু দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে ড্রাইভারকে ডাক দেন বাবা। তার গলার স্বর ক্ষীণ। : জি স্যার? : তাহেরকে যদি পুলিশ নিয়ে যায় আর মারধর করে, ব্যাপারটা খুব খারাপ হবে। আমি তার বাবার কাছে মুখ দেখাতে পারবো না। : বুঝতে পারতেছি স্যার, আপনে চাইতাছেন ইস্পিড যাতে আরও বাড়াই। কিন্তু স্যার, তাহের ভাইরে যদি পুলিশে নিয়াও যায়, থানা থেইকা হোক, কোট থেইকা হোক, ছাড়ায়া আনতে পারবেন। আল্লাহর রহমতে আপনের সেই ক্ষমতা আছে। মানে আমি বলতে চাইতাছি, আপনে যতক্ষণ আছেন, ততক্ষণ তাহের ভাইয়ের টুকটাক বিপদ হইলেও বড় কোনো বিপদ হইতে পারবো না। কিন্তু খোদায় না করুক, গাড়ির ইস্পিড আরও বাড়াইতে গিয়া যদি কোনো একটা অ্যাক্সিডেন হয় আর আপনের কোনো সমস্যা হইয়া যায়, তখন তারে কেডা দেখবো? : অ্যাই, অলক্ষুণে কথা বলবে না তো! মা ধমক দেন। : অলক্ষণ্যা কথা না ম্যাডাম। যেইটা বাস্তব, সেইটাই বললাম। তারপরেও যদি মনে করেন খারাপ কিছু বইলা ফেলছি, মাফ কইরা দিয়েন। |
|