একাত্তরের মিরপুরে ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে সত্তরের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তির আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু ঢাকার উপকন্ঠের মিরপুরের পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নতর। কারন মিরপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী ছিল অবাঙালী এবং তারা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের সমর্থক ও সহযোগী। একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়াল রাত্রির পর মিরপুরের বিহারীরা কূটকৌশল ও শক্তি প্রয়োগ করে বসবাসরত বাঙালিদেরকে মিরপুরের ভিতরেই আটকে রাখে। তারপর মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে তারা অসহায় নিরস্ত্র বাঙালিদেরকে ঠান্ডা মাথায় ধাপে ধাপে হত্যা করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মিরপুরে ১১টি বধ্যভূমি আবিস্কৃত হয় যেখানে বাঙালিদের উপর ব্যাপকহারে গণহত্যা চালানো হয়েছিলো। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মিরপুরের বিহারীরা অন্যান্য অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানীদের সহযোগী রাজাকার আলবদর ও সামরিক পোশাক ফেলে আসা পরাজিত পাকিস্তানী সেনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুর দখলে রাখে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অবশেষে স্বাধীনতার ৪৬ দিন পর ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ মিরপুরের সশস্ত্র বিহারীরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। এর জন্য প্রাণ দিতে হয় সেনাবাহিনী ও পুলিশের দেড়শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে। বাঙালির গর্ব কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ঔপন্যাসিক জহির রায়হানকে বিহারীরা মিরপুরে ৩০ জানুয়ারি কোথায় কিভাবে হত্যা করেছিল তাও এখন সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা গেছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অবরুদ্ধ মিরপুরের বাঙালিদের উপর পাকিস্তানী শাসক ও তার দোসরদের ভয়াবহ বর্বর হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংস ও নিষ্ঠুরতার নিদারুন কাহিনী উঠে এসেছে এই বইটিতে। বেরিয়ে এসেছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য, অজানা কথা, আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও ভবিষ্যতের প্রয়োজনে যা জানা আমাদের খুবই প্রয়োজন। |
|